প্রণয়ন কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ
ঢাকা ষ্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫) এর আওতায় সমগ্র রাজউক এলাকার জন্য আগষ্ট ২০০৪ সালে ড্যাপ (২০১০-২০১৫) প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক গেজেট আকারে তা প্রকাশিত হয় ২০১০ সালের ২২শে জুন। উক্ত মহাপরিকল্পনার আলোকেই রাজউক কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ২০১০-২০১৫ এর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় রাজউক আওতাধীন এলাকার মধ্যে পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে নতুনভাবে যুগোপযোগী বিস্তারিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক কর্তৃক ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ২০১৬-২০৩৫ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিগত ০২ মার্চ, ২০১৫ তারিখে উক্ত প্রকল্পের জন্য দুইটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যথা- শেলটেক (প্রাঃ) লিমিটেড ও ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেড কে নিয়োগ প্রদান করা হয়। পূর্বের ড্যাপের ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধন এবং স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে একটি জনবান্ধব, বাস্তবসম্মত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ২০১৬-২০৩৫ প্রণয়নই রাজউক এর চলমান ড্যাপ প্রকল্পের মূখ্য উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পের আওতায় গৃহীত উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) যথাযথ ভূমি ব্যবহার সুনির্দিষ্টকরণ
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ আবাসস্থলের জন্য নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে ও বাস্তবতার নিরিখে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে সুনির্দিষ্ট ভূমি ব্যবহার যেমন- আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প এলাকা, বিনোদন পার্ক, খেলার মাঠ, লেক, সাংস্কৃতিক বলয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার সহ সামাজিক চাহিদার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান সমূহ চিহ্নিত করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার নিজˉ¦ বৈশিষ্ট্য সমূহ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে নেয়া হচ্ছে। বন্যা প্রবাহ এলাকা চিহ্নিতকরণ, খালের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা এবং পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে IWM ও CEGIS কর্তৃক রাজউক আওতাধীন এলাকার জন্য Flood Hydrology Study করা হয়েছে যার সুপারিশসমূহ প্রনীতব্য নতুন ড্যাপে সমন্বয় করা হবে।
(খ) জনঘনত্ব জোনিং
ঢাকা শহরের জনসংখ্যার চাপ কমানোর লক্ষ্যে প্রথমবারের মত, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনঘনত্ব জোনিং (Density Zoning) এর বিষয়টি সন্নিবেশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব নির্ধারণ ও সে মোতাবেক উক্ত এলাকায় ভূমি ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদি সংস্থানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বাস্তবসম্মত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
(গ) PRA (Participatory Rapid Appraisal) সেশন পরিচালনা
এই পরিকল্পনা প্রণয়নে জনসাধারণের সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য গণ শুনানীর ব্যবস্থা করা হয়। জণগণের মতামত নিয়ে, তাঁদের চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা মহানগরীর আওতাধীন এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কমিশনার, বিভিন্ন পৌরসভার চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, এনজিও, সুশীল সমাজসহ সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় PRA (Participatory Rapid Appraisal) সেশন পরিচালনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ সকল চজঅ সেশনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামত সন্নিবেশ করে এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সম্ভাব্য সমাধান উদ্ভাবন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সম্পৃক্তকরণ প্রভৃতি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত শেলটেক (প্রাঃ) লিঃ এর অংশে ৩১ টি PRA সেশন ও ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিঃ এর অংশে ৫১ টি PRA সেশন পরিচালনা করা হয়েছে।
(ঘ) আরবান রিডেভেলপমেন্ট এর প্রবর্তন
পুরান ঢাকার অতি ঘন বসতিপূর্ণ, দুর্যোগপ্রবণ, জরাজীর্ণ ইমারতসমূহ থেকে উক্ত এলাকাবাসীকে পরিত্রাণ দেওয়ার লক্ষ্যে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সাইট চিহ্নিত করে ‘আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’ গ্রহণের বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর মতামতসমূহ সন্নিবেশ করে অল্প জায়গায় নাগরিক সুবিধাদি সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে পুরান ঢাকায় পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়। নতুন ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫)-এ পুরান ঢাকার অতি ঘন বসতিপূর্ণ, দুর্যোগপ্রবণ, জরাজীর্ণ ইমারতসমূহ থেকে উক্ত এলাকাবাসীকে পরিত্রাণ দেওয়ার লক্ষ্যে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সাইট চিহ্নিত করে এলাকাবাসীর মতামতসমূহ সন্নিবেশ করে আরবান রিডেভেলপমেন্ট ধারণার প্রবর্তনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজউক কর্তৃক পুরান ঢাকার কোতয়ালী থানার অন্তর্গত বংশাল এলাকায় স্থানীয় জমির মালিকদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উক্ত এলাকার জন্য আরবান রিডেভেলপমেন্ট এর কেস স্টাডি হিসাবে একটি কনসেপ্টুয়াল প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।
(ঙ) ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন ধারণার প্রবর্তন
রাজউক আওতাধীন এলাকাকে ছোট ছোট ব্লক আকারে চিন্তা করে প্রয়োজনীয় আবাসন সুবিধা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, পার্ক ও খেলার মাঠ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধার সমন্বয়ে প্রতিটি ব্লককে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নতুন ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫)-এ রয়েছে। ব্লকভিত্তিকভাবে নাগরিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হলে শহরের প্রকট যানজট সমস্যারও স্ট্রাটেজিক সমাধান হতে পারে।
(চ) টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) কর্তৃক অনুমোদনঃ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা প্রণয়ন শাখা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “প্রিপারেশন অব ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) ফর ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান এরিয়া” প্রকল্পের খসড়া পরিকল্পনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানদ্বয় কর্তৃক বিগত জুলাই, ২০১৯ খ্রিঃ এ জমা প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রকল্পের TMC এর সভা গত ০৭ আগস্ট, ২০১৯ খ্রিঃ এ অনুষ্ঠিত হয়।
(ছ) গণশুনানীঃ
TMC এর সদস্যগণ এর মতামত, TMC সভার সিদ্ধান্ত, প্রকল্প দপ্তরের সাথের বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট ও ডাটাবেজ নিয়ে একাধিক সভা, বিগত ১৪ নভেম্বর ২০১৯ খ্রিঃ তারিখে চেয়ারম্যান, রাজউক মহোদয়ের সভাপতিত্বে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (২০১৬-২০৩৫) প্রকল্পের চূড়ান্তকরণের নিমিত্ত অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত এর আলোকে বিগত ১৫/০৭/২০২০ তারিখে TI Act- এর ধারা ৭৩ (১) মতে গণশুণানী অনুষ্ঠানের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়, যার স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০.০৩৪.০৬.০১৩.১৫-৯৭। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন এবং ০২/০৯/২০২০ তারিখে প্রকাশিত গেজেট নোটিফিকেশন সাপেক্ষে বিগত ০৬/০৯/২০২০ তারিখ থেকে ০৪/১১/২০২০ তারিখ পর্যন্ত ৬০ দিন (দুই মাস) ব্যাপী গণশুণানীর আয়োজন করা হয়, যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগরীর উন্নয়নের সাথে জড়িত সকল সংস্থা ও সর্বপরি জনসাধারণের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং উদ্যোগ একান্তভাবে প্রয়োজন। বর্তমানে ঢাকাবাসী নানা সমস্যায় জর্জরিত। যানজট, জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য নাগরিক সমস্যায় প্রতিনিয়ত নাকাল হচ্ছে মানুষ। যত্রতত্র কলকারখানা স্থাপনের কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। নদী, খাল ও জলাশয় ভরাট, বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে বাধাগ্রস্ত, নির্বিচারে কৃষিভূমি ধ্বংস করে আবাসিক এলাকায় পরিণত করা হচ্ছে। ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান মূলত সমাজের সকল স্তরের মানুষের চাহিদা এবং চিন্তাভাবনার একটি মিশ্র প্রতিফলন। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহনগরীর সামগ্রিক উন্নয়নে একটি সাম্যাবস্থা তৈরী হবে বলে আশা করা যায়।